টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না জেনে রাখুন

আপনি কি এই টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না এটা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে সঠিক পোষ্টে চলে এসেছেন। আজকের পোষ্টে আমরা সবাই কে এই টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না এবং টনসিল অপারেশনের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। চলুন শুরু করা যাক।
টনসিল কি?
টনসিল হল গলার পেছনে দুটি ছোট, গোলাকার অঙ্গ যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। টনসিলগুলি লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি অংশ। টনসিলগুলি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। টনসিলগুলিতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
টনসিলগুলি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বড় হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে টনসিলগুলি ছোট হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, টনসিলগুলি এত বড় হয়ে যেতে পারে যে এগুলি শ্বাস নিতে বা গিলতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। এই ক্ষেত্রে, টনসিল অপসারণ করা যেতে পারে।
টনসিল অপসারণ একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের পরে, কয়েকদিন ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে। তবে, বেশিরভাগ লোক অস্ত্রোপচারের পরে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠে।
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না
বন্ধুরা প্রথমে আমরা চলুন জেনে নেই যে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না । তারপর আমরা বাকি পয়েন্ট গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করব ইনশাল্লাহ।
টনসিল হলে কিছু খাবার এড়ানো উচিত, কারণ এগুলি গলা ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে:
- অ্যাসিডযুক্ত খাবার, যেমন লেবু, কমলা, টমেটো, আঙ্গুর, কুল, স্ট্রবেরি, আনারস, আচার, সস, ওয়াইন, কফি, সোডা, চকোলেট ইত্যাদি।
- তেলযুক্ত খাবার, যেমন মাখন, চিজ, ভাজা খাবার, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রাইড মাছ, পিৎজা ইত্যাদি।
- কাঁচা খাবার, যেমন সালাদ, ফল, শাকসবজি, মাশরুম, ব্রকোলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন ইত্যাদি।
- চটচটে খাবার, যেমন চকলেট, আইসক্রিম, মাখন, চিজ, রুটি, পাস্তা, ভাত ইত্যাদি।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম খাবার।
- খুব মসলাযুক্ত খাবার।
টনসিল হলে এগুলি এড়িয়ে চললে গলা ব্যথা কমবে এবং আপনি আরাম বোধ করবেন।
টনসিল অপারেশনের পর খাবার তালিকা
এতক্ষন আপনারা জানলেন যে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না। তো চলুন তাহলে বেশি দেরি না করে এখন আমরা এই টনসিল অপারেশনের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখি।
টনসিল অপারেশনের পর কয়েকদিন খাওয়া-দাওয়া করা কঠিন হতে পারে। এ সময় আপনার গলা ব্যথা, অস্বস্তি এবং রক্তপাত হতে পারে। তাই এই সময় হালকা এবং নরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
টনসিল অপারেশনের পর খাওয়ার জন্য কিছু তালিকা এখানে দেওয়া হল:
- স্যুপ: স্যুপ একটি ভাল খাবার যা গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আপনি মুরগির স্যুপ, মাছের স্যুপ বা সবজির স্যুপ খেতে পারেন।
- ফলের রস: ফলের রস ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এগুলি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আপনি আপেল, কমলা, কলা, পেঁপে বা আনারসের রস খেতে পারেন।
- আইসক্রিম: আইসক্রিম একটি ঠান্ডা খাবার যা গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে শীতল এবং আরামদায়ক অনুভব করায়।
- নরম খাবার: টনসিল অপারেশনের পর নরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- পাস্তা, ভাত, মাছ, মুরগী, ডিম, কেক, প্যাস্ট্রি ইত্যাদি।
টনসিল অপারেশনের পর প্রথম কয়েকদিন কঠিন খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। যেমন- ফাস্ট ফুড, ভাজা খাবার, ঝাল খাবার, টক খাবার ইত্যাদি। এগুলি আপনার গলা ব্যথা বাড়াতে পারে।
টনসিল অপারেশনের পর প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন। এটি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। আপনি জল, ফলের রস, দুধ, স্যুপ ইত্যাদি পান করতে পারেন।
টনসিল অপারেশনের পর আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। এটি আপনার ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করবে।
টনসিল অপারেশনের পর আপনার গলা পরিষ্কার রাখুন। এটি সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করবে। আপনি গলা পরিষ্কার করতে লবণ জল ব্যবহার করতে পারেন।
টনসিল অপারেশনের পর ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন। এগুলি আপনার ক্ষত সারাতে বাধা দিতে পারে।
টনসিল অপারেশনের পর আপনার শরীরকে সময় দিন। এটি সম্পূর্ণরূপে সেরে উঠতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
টনসিল অপারেশন করার পর করণীয়
যেহেতু আপনার টনসিল অপারেশন করা হয়েছে তাই আপনাকে অবশ্যই এটাও জানতে হবে যে এইটনসিল অপারেশন করার পর করণীয় কি কি র্যেছে। চলুন তাহলে এখন আমরা টনসিল অপারেশন করার পর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।
টনসিল অপারেশন হল একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার যা টনসিল অপসারণের জন্য করা হয়। টনসিল হল গলার পেছনে দুটি ছোট, গোলাকার অঙ্গ যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে টনসিল অত্যধিক বড় বা প্রায়শই সংক্রমিত হয়। এই ক্ষেত্রে, টনসিল অপসারণ করা যেতে পারে।
টনসিল অপারেশনের পর, আপনাকে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে যাতে আপনি সঠিকভাবে সুস্থ হতে পারেন।
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন। তরল পান করা আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। আপনি জল, ফলের রস, দুধ, স্যুপ ইত্যাদি পান করতে পারেন।
- কঠিন খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। টনসিল অপারেশনের পর কয়েকদিন খাওয়া-দাওয়া করা কঠিন হতে পারে। এ সময় আপনার গলা ব্যথা, অস্বস্তি এবং রক্তপাত হতে পারে। তাই এই সময় হালকা এবং নরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। এটি আপনার ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করবে।
- আপনার গলা পরিষ্কার রাখুন। এটি সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করবে। আপনি গলা পরিষ্কার করতে লবণ জল ব্যবহার করতে পারেন।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন। এগুলি আপনার ক্ষত সারাতে বাধা দিতে পারে।
- আপনার শরীরকে সময় দিন। এটি সম্পূর্ণরূপে সেরে উঠতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
টনসিল অপারেশনের পর যদি আপনার কোনও সমস্যা হয়, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
টনসিল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরঃ
নিচে এই টনসিল নিয়ে মানুষের মিনে যে সকল প্রশ্ন এসে থাকে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-
১। টনসিল হওয়ার কারণ কি?
টনসিলাইটিস হল টনসিলের প্রদাহ। টনসিল হল গলায় অবস্থিত দুটি ছোট, নরম গ্রন্থি। এগুলি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তবে, কখনও কখনও টনসিলগুলি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে, যার ফলে টনসিলাইটিস হয়। টনসিলাইটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে গলা ব্যথা, জ্বর, মাথাব্যথা, এবং ক্ষুধামন্দা। টনসিলাইটিস সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিত্সা করা হয়। তবে, যদি টনসিলাইটিস গুরুতর হয়, তাহলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
২। টনসিলের ব্যথা হয় কেন?
গলা, নাক, কিংবা মুখ হয়ে শরীরে প্রবেশ করা জীবাণু বাভাইরাসই দায়ী, টনসিলের সংক্রমণের জন্যে। এই সংক্রমণের ফলে যদি টনসিলে প্রবল ব্যথা হয় তখন ওষুধ কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াদরকার।
৩। টনসিল অপসারণ কি ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে
হ্যাঁ, টনসিল অপসারণ ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে। টনসিল হল ইমিউন সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে। টনসিল অপসারণ করলে, ইমিউন সিস্টেমকে এই রোগজীবাণুগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেশি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।