পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক – পান্তা ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম, পান্তা ভাত হচ্ছে বাঙ্গালীদের গ্রামগঞ্জের মানুষের ঐতিহ্য । তবে এই পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক রয়েছে এছাড়াও পান্তা ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে, যার কারণে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে পাঠকদের কে অবগত করার জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলটি প্রকাশ করা। তো যদি আপনি পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক এবং পান্তা ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে চান  তাহলে পোস্টটি শেষে পর্যন্ত পরবেন ।

সূচি পত্র দেখুন

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক – পান্তা ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্রামগঞ্জের মা ও বোনেরা ভাতের সাথে পানি মিশিয়ে নতুন একটা খাবার বানায় যেটাকে পান্তা ভাত বলা হয় । আর এটি হচ্ছে বাঙ্গালীদের বিরাট বড় একটি ঐতিহ্য । এমনকি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রামগঞ্জে শহরের আনাচে-কানাচে পান্তা ভাত এবং ইলিশ মাছ খাওয়া হয়  । তবে পান্তা ভাতের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এই পান্তা ভাতের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক রয়েছে যার কারণে আজকের পোস্টে এই সকল বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে । চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক ।

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক - পান্তা ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা

পান্তা ভাতের উপকারিতা

বন্ধুরা সর্বপ্রথম আমরা এই পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং তারপর এই পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে । পান্তা ভাতের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে কারণ এই ভাত খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। নিচে আমরা এক এক করে পয়েন্টগুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম।

১. খনিজ লবণ এবং মিনারেল এর ঘাটতিপূরণ

আমাদের শরীরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখার জন্য মিনারেল এবং খনিজ লবণের গুরুত্ব অপরিসীম । কিন্তু আমরা প্রতিদিন এমন কোন খাদ্য খেতে পারি না যেটাতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং মিরারেল পাওয়া যায় । ভাত কে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার ফলে পান্তা ভাত তৈরি হয় । আর ভাতের মধ্যে থাকে শর্করা এবং এই শর্করা সারারাত পানিতে থাকার ফলে গাজন প্রক্রিয়ায় ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে । এবং এই ল্যাকটিক এসিড তৈরির ফলে ভাতে আগে যে পরিমাণ শর্করা ছিল সেটার শক্তি হাজারগুণ বৃদ্ধি পায় ।

আর যখন আমরা এই পান্তা ভাত খাব তখন আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবন এবং শর্করা প্রবেশ করবে যেটা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি ব্যাপার ।

পড়ুনঃ টুথপেস্ট দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়

২. ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে

এখন প্রায় প্রত্যেক মানুষের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে । এমন অনেক মানুষ আছে যাদের শরীরে ক্যালসিয়াম ঠিকমতো না থাকার কারণে হাড় ক্ষয় যাওয়া সহ হাড়ের আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো তীব্র আকার ধারণ করছে । আর এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি সমস্যাটা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় ।

আর এখানে ভাতের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম । কিন্তু ভাত যেহেতু গাজন প্রক্রিয়ার ফলে পান্তাভাতে রূপান্তরিত হয় তাই সেখানে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আরো বহুবনে বৃদ্ধি পায় । আপনাদের জানার জন্য বলি, প্রতি 100 গ্রাম ভাতে সাধারণত ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের উপস্থিত থাকে। কিন্তু যখন এই ভাতগুলো গাজন প্রক্রিয়ার ফলে পান্তা ভাতের রূপান্তরিত হয়ে যায় তখন সেখানে প্রতি 100 গ্রাম ভাতে ৮০০ মিলিগ্রাম এর ও বেশি ক্যালসিয়াম তৈরি হয়ে যায়।  তাই যাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে তারা নিয়মিত পান্তা ভাত সেবন করবেন আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই আপনার এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে ।

৩. মানব দেহকে সতেজ রাখতে ভূমিকা পালন করে

সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে থাকার জন্য আমাদের দেহকে সতেজ রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন একটি কাজ। তবে জানলে খুশি হবেন পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর আগের থেকে বেশ ভালো সতেজ থাকবে । মানব দেহকে সতেজ রাখার জন্য এখানে এর তাপমাত্রা এবং অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ।

অম্ল ক্ষার ভারসাম্য অর্থাৎ মানবদেহের পিএইচ ঠিক রাখতে হয়। কিন্তু যখন গ্রীষ্ম কাল আসে তখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। তবে তখন যদি আমরা পান্তা ভাত সেবন করতে পারি তাহলে আমাদের দেহ ঠান্ডা থাকবে এবং আমাদের শরীর সতেজ থাকবে । এছাড়াও যখন আপনি পান্তা ভাত খাবেন তখন দেখবেন আপনার শরীর হালকা অনুভূত হবে যার ফলে আপনি অনেক আরাম অনুভব করবেন এবং স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন ।

৪. শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করতে

রক্ত আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদার্থ । শরীরের মধ্যে রক্ত আছে বলে আমরা বেঁচে আছি যদি এই রক্ত না থাকে তাহলে আমরা এক মিনিটও বাঁচতে পারবো না । এই রক্তের কারণেই আমাদের শরীরের মধ্যে এসিড ও ক্ষারের ভারসাম্যতা রক্ষা পায় এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে ।

তবে অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন মানুষের শরীরে রক্তের পরিমাণ কম হয়ে যায় যেটাকে আমরা রক্তস্বল্পতা বলে থাকি ।

তো এখানে রক্তের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান থাকে যার নাম হিমোগ্লোবিন, যেটা আমাদের শরীরের নতুন রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে এবং এই হিমোগ্লোবিন কমে গেলে আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা যায় ।  এই হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় আয়রন নামক পদার্থ থেকে । অর্থাৎ আমরা যদি শরীরে ঠিকমতো আয়রন এর যোগান দিতে পারি তাহলেই কেবল আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যাবে ।

এখানেই আসে আসল কথা আর সেটা হচ্ছে পান্তাভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যেটা আমাদের শরীরের প্রবেশ করলে রক্তস্বল্পতা দূর করতে অনেকটা সাহায্য করবে। জানিয়ে রাখা ভালো প্রতি 100 গ্রাম পান্তা ভাতে ১০ থেকে ৭০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আয়রন উপস্থিত আছে। তাই আপনারা অবশ্যই নিয়মিত এই পান্তা ভাত খাওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে আশা করি শরীরের রক্তস্বল্পতা বেশ খানিকটা উপশম হবে । এছাড়াও বয়সন্ধিকালে মেয়েদের শরীরে প্রচুর পরিমানে আয়রন এর অভাব দেখা যায়, তাদেরও উচিত এই পান্তা ভাত খাওয়া, তাহলে অবশ্যই শরীরের আয়রন এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।

৫. রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে

পান্তাভাত এর মধ্যে যে শুধু আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং খনিজ লবণ আছে এমনটা নয়। বরং এগুলোর থেকেও এর মধ্যে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম এর মত এর গুরত্বপূর্ন উপাদান গুলো ও প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত আছে। বয়স বেড়ে গেলে মানুষের হৃদপিনদের ভারসাম্য আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে । কিন্তু বন্ধুরা আমরা চাইলে কিছু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে এই হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক অবস্থাকে ঠিক রাখতে সক্ষম হবে ।

পড়ুনঃ চালের গুড়ার উপকারিতা – চালের গুড়ার ফেসপ্যাক বানানো শিখুন

যদি আমরা আমাদের হৃদপিন্ডের ভারসাম্য ঠিক রাখতে চাই অর্থাৎ আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে চাই তাহলে আমাদেরকে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে । আর যদি আমরা সাধারণ ভাতকে পান্তাভাতে রূপান্তরিত করতে পারি তাহলে সেখানে এর পটাশিয়াম এর মাত্রা প্রতি 100 গ্রাম ভাতে ৮০০ মিলিগ্রাম বৃদ্ধি পায় । তাই যদি আপনার রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই পান্তা ভাত গ্রহণ করবেন তাহলে কিছুটা  নিয়ন্ত্রণ হবে ।

৬. শরীরের শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

শক্তি এমন একটি জিনিস যেটা ছাড়া আমরা চলাফেরা করতে পারবোনা । অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীর চলা ফেরা করার জন্য শক্তি দরকার হয় । আর এই শক্তি উৎপাদনের প্রধান উৎস হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ যদি আমরা কার্বোহাইড্রেট পদার্থটি শরীরের প্রবেশ করাতে পারি । তাহলে দ্রুত আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

ভাতের মধ্যে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকে আর যখন এটি পান্তা ভাতে রূপান্তরিত হয় তখন এই কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা আরো বহু বৃদ্ধি পায় । সুতরাং যদি আমরা পান্তা ভাত খাই তাহলে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট এর যোগান দিতে পারব এবং শারীরিক শক্তি অনেক দ্রুত বৃদ্ধি হবে ।

৭. শরীরের পানি শূন্যতা করতে রাখতে সাহায্য করে

আমাদের শরীরের মধ্যে ৯০% থাকে জল এবং বাকি ১০% থাকে বিভিন্ন ধরনের উপাদান । তাহলে বুঝতেই পারছেন শরীরের জন্য এই পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । তো যদি আপনি স্বাভাবিক থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার শরীরকে পানি শূন্যতা রাখা যাবে না । অর্থাৎ শরীরে সবসময় পানি যোগান দিতে হবে ।

তো যেহেতু সারারাত ভাতকে ভিজিয়ে রাখার ফলে পান্তা তৈরি হয় তাই এই পান্তার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থেকে যায় । অর্থাৎ পান্তা ভাতের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যেটা আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর আমাদের শরীরের পানি শূন্যতাকে রোধ করতে সাহায্য করে । তাই যদি আপনার শরীরের মধ্যে পানি শূন্যতা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই আপনি নিয়মিত পান্তা ভাত সেবন করবেন । আর এই পান্তাভাত যেহেতু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান তাই এটার কোন সাইড ইফেক্ট নেই যে কোন বয়সের যেকেউ চাইলে এই পান্তা গ্রহণ করতে পারবে ।

৮. পান্তা ভাত হচ্ছে ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন বি ১২ এর উৎস

এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অনেক কিছু আছে যা আপনারা এতক্ষণ পরে আসলেন। কিন্তু ভিটামিনের দিক থেকেও এই খাবারটি পিছিয়ে নেই । অর্থাৎ ভিটামিন বি৬ এবং বি১২ এর প্রধান উৎস বলা যায় পান্তা ভাতকে । অর্থাৎ পান্তা ভাত খেলে ভিটামিন বি ৬ এবং ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি স্বাভাবিকভাবে পূরণ হয়ে যাবে ।

এই ভিটামিন বি আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান যা আমি বিভিন্ন পোস্টে আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।  তাই যদি আপনারা আপনাদের শরীরকে ঠিক রাখতে চান তাহলে অবশ্যই শরীরকে ভালো মতো ভিটামিন বি এর যোগান দিতে হবে ।

৯. হজম শক্তির বৃদ্ধি করে

হজম ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া আমাদের প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । যদি এই হজম ক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয় তাহলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে । আর যেহেতু পান্তা ভাত গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় তাই এই ভাত গ্রহণ করলে আমাদের পাকস্থলীর মধ্যে এনজাইমের বৃদ্ধি ঘটে এবং খাবার গুলো খুব দ্রুত হজম হয়ে যায় ।

আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে পেয়েছেন যে যারা গাজন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন খাদ্যগুলো বেশি বেশি গ্রহণ করে তাদের পেটের মধ্যে হজম এর কোন ধরনের সমস্যা থাকে না । এছাড়াও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে তারা যদি এই পান্তা ভাত গ্রহণ করতে পারে তাহলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজে দূর হয়ে যায় । এক কথায় আপনার হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে এই পান্তা ভাতের ভূমিকা অপরিসীম ।

১০. ত্বকের সৌন্দর্যতা বিজয় রাখে

আমাদের ত্বককে স্বাভাবিক রাতে পানির গুরুত্ব আর পান্তা ভাতের মধ্যে পানির কোন অভাব নেই । এছাড়া পান্তা ভাত আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর কোলেজেন সৃষ্টি করতে পারে যা আমাদের ত্বকের ইলাস্টিসিটি রক্ষা করতে সাহায্য করে । আর আমরা যদি আমাদের ত্বকের ইলাস্টিসিটি রক্ষা করতে পারি তাহলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের যে সমস্ত উপাদান দরকার সেগুলো স্বাভাবিকভাবে পূরণ হয়ে যায় ।

তো বন্ধুরা যদি আপনি আপনার ত্বককে সুস্থ স্বাভাবিক দেখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় এই ঐতিহ্যবাহী পান্তা ভাত খাদ্যটি রেখে দিতে পারেন ।

পান্তা ভাত তৈরির ক্ষেত্রে কিছু টিপস

মনে রাখবেন চাল হয় দুই ধরনের একটা হচ্ছে লাল এবং আরেকটা হচ্ছে সাদা। তো যদি আপনারা সাদা চাল এর ভাত থেকে পান্তা ভাত তৈরি করেন , তার পুষ্টিগুণ লাল চাল থেকে পান্তা ভাত এর পুষ্টিগুণ থেকে কম হবে । অর্থাৎ সবসময় চেষ্টা করবেন লাল চাল থেকে তৈরি পান্তা ভাত গ্রহণ করার তাহলে আরো ভালো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য পাবেন ।

এছাড়াও আমাদের গ্রামের মা ও বোনেরা বিভিন্ন সময় দেখা যায় ভাত রান্না করার সময় অতিরিক্ত মার গুলো ফেলে দেয় । কিন্তু বন্ধুরা এই মারের মধ্যে আছে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধকর উপাদান। তাই যে ভাত এই মার ফেলে না দিয়ে তৈরি হয় সে ভাত থেকে উৎপন্ন পান্তা ভাত বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধি হয় । তাই যদি আপনারা পান্তা ভাত থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করতে চান তাহলে কখনোই ভাতের মার ফেলে দিবেন না মার সহ ভাত রান্না করবেন।

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক

বন্ধুরা উপরে আমরা এতক্ষন পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম কিন্তু প্রত্যেকটা খাদ্যের ভালো দিক থাকার পাশাপাশি এর খারাপ দিক রয়েছে । ঠিক তেমনি পান্তা ভাতের ও কিছু খারাপ দিক বা অপকারিতা রয়েছে যেগুলোর নিচে বর্ণনা করা হলো ।

  • যদিও পান্তা ভাত খেলে হজমের উপকার হয় কিন্তু যাদের পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্যাস্ট্রিক রয়েছে তারা কখনোই বেশি পান্তা ভাত খাবে না এতে করে আপনাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে ।
  • এছাড়াও যাদের বয়স বেশি হয়ে গেছে তারাও এই পান্তা ভাত এড়িয়ে চলবেন কারণ পান্তা ভাত গ্রহণের ফলে আপনাদের শরীরে শক্তি কম হয়ে যেতে পারে এবং শরীরের ভিতরে আরো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
  • পান্তা ভাত তৈরির সময় 10 থেকে 12 ঘন্টার বেশি কখনো ভাত ভিজিয়ে রাখবেন না । কারণ যদি আপনারা ভাত বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখেন তাহলে এটার ভেতর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব বেড়ে যেতে পারে যেটা আপনাদের শরীরের উপকার থেকে ক্ষতি বেশি করবে ।
  • পান্তা ভাত খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোমতো ভাতগুলো পরীক্ষা করে নিবেন যে এগুলো মানসম্মত আছে নাকি নষ্ট হয়ে গেছে যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কখনোই এগুলো খাবেন না ।
  • যাদের শরীরের গ্লুকুজের পরিমাণ বেশি অর্থাৎ যাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ ডায়াবেটিস আছে তারা এই পান্তা ভাত থেকে দূরে থাকবেন ।
  • যে সমস্ত মা ও বোনেরা গর্ভবতী আছেন তারা কখনোই পান্তা ভাত খাবেন না কারণ এতে করে আপনাদের পেটের ভেতর থাকা সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে এবং সন্তানের ওজন কমে যেতে পারে ।

উপরে আমরা বেশ কিছু পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আপনার অবশ্যই এগুলো ভালোমতো জেনে তারপর পান্তা ভাত গ্রহণ করবেন।

গর্ভাবস্থায় পান্তা ভাত খেলে কি হয়

বন্ধুরা জানলে অবাক হবেন গর্ভাবস্থায় পান্তা ভাত খেলে আপনাদের উপকারে থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । অনেকে জানতে চায় যে গর্ভাবস্থায় পান্তা ভাত খেলে কি হয় তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব আপনারা কখনোই গর্ভ অবস্থায় পান্তা ভাত গ্রহণ করবেন না । কারণ এই পান্তা ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় উপাদান যেটা শরীরে প্রবেশ করলে আপনাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং চর্বী ও বেড়ে যেতে পারে যেটা আপনার পেটের সন্তানের জন্য মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে । আর যদি কেউ ডায়াবেটিস সমস্যায় থাকার পরেও গর্ভবতী হন তাহলে তাকে পান্তা ভাত একদমই গ্রহণ করা যাবে না ।

পরিশেষে

বন্ধুরা আজকের পোস্টে আমরা পান্তা ভাত সম্পর্কে যাবতীয় ইনফরমেশন গুলো আপনাদেরকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রত্যেকটা খাবারের উপকারী দিক থাকার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও থাকে যেগুলো আমরা আমাদের প্রত্যেক পোস্টে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি । শুধু যদি উপকারিতা বলে যাই তাহলে আপনি এই খাবার গ্রহণ করার ফলে পরবর্তীতে সমস্যায় পরতে পারেন যার কারণে উপকারিতা টাও বলা হয় ।

একটা কথাই বলবো কোন খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করবেন না। যদি আপনার শরীরে খাবারটি ভালো ফলাফল দেখাতে না পারে তাহলে সেটা সাথে সাথেই ত্যাগ করে ফেলুন। আশা করি আজকের পোস্টে আমি যে সমস্ত টপিক দর্শকদের মাঝে বোঝানোর চেষ্টা করেছি সেগুলো সবাই বুঝতে পেরেছেন। যদি কোন টপিক আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হয় বা আরো নতুন কিছু জানতে চান তাহলে অবশ্যই কমেন্টে প্রশ্ন করবেন আমরা যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ।

ভালো লাগতে পারে

Back to top button