কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা ও রূপচর্চা – বিস্তারিত জানুন
হলুদ সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ-ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রান্নার মসলা হিসেবে হলুদের গুঁড়ো বেশ জনপ্রিয়।
হলুদের প্রথম উৎপত্তি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এটি প্রায় 20 থেকে 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জন্মাতে সক্ষম। ভারতবর্ষে আনুমানিক 2500 বছর ধরে হলুদের ব্যবহার চলে আসছে। হলুদের গুঁড়ো থেকে কাঁচা হলুদ অনেক বেশি উপকারী। তো চলুন জেনে নেই কাঁচা হলুদের উপকারিতা গুলো এবং রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
• খাদ্য পরিপাক: গ্যাস্ট্রো – প্রটেক্টিভ কিছু গুণাগুণ থাকে কাঁচা হলুদের মধ্যে। যা আমাদের হজম , পেটে গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• কাঁচা হলুদ শিশুরা খেলে তাদের লিউকেমিয়া ঝুঁকি কমিতে সাহায্য করে ।
• কাঁচা হলুদ ড্রাগ জাতীয় দ্রব্যের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে।
• কাঁচা হলুদ হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে এবং হারকে সুস্থ ও মজবুত রাখে। কাঁচা হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন। আবার অনেক সময় মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় হয় হওয়া রোধ করে কাঁচা হলুদ।
• কাঁচা হলুদ ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার কমাতে সাহায্য করে। আবার কাঁচা হলুদে বিদ্যমান ইনফ্লেমেটরি আমাদের চাপ, উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেয়।
• ডায়াবেটিস: কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন এন্টি ডায়াবেটিস হিসেবে কাজ করে। আবার কাঁচা হলুদ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
• কাঁচা হলুদ ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদে বিদ্যমান কারকিউমিন আমাদের ক্যান্সারের সমস্যা দূর করে। কারকিউমিন ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি হওয়া থেকে রোধ করে । যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যাবে। গবেষণায় প্রমাণিত যে কাঁচা হলুদ প্রায় 56 রকমের ক্যান্সার সমস্যা দূরীকরণ করতে সাহায্য করে।
• কাঁচা হলুদ মহিলাদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
• কাঁচা হলুদ আমাদের চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
• কাঁচা হলুদ হাড় জোড়া লাগাতে সাহায্য করে। আদিমকাল থেকে আমাদের শরীরের হাড়ের বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত আমাদের দেশের বৈদ্য বা কবিরাজরা হাত-পা ভেঙে গেলে কাঁচা হলুদ ও তার সাথে চুন ব্যবহার করে এক ধরনের ঔষধ তৈরি করে। আবার হাড়ভাঙ্গা জায়গায় কাঁচা হলুদ বেটে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। কাঁচা হলুদের মধ্যে বিদ্যমান এন্টি ইনফ্লামেটরি আমাদের শরীরের ব্যথা বা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• কাঁচা হলুদ আমাদের মন মরা ভাব কাটাই। কাঁচা হলুদের মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুন । যা আমাদের ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তা, বদ মেজাজ ইত্যাদি দূর করে আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে।
• কাঁচা হলুদ আমাদের দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। দাঁতের উপরে বিদ্যমান এনামেলের আস্তরণকে রক্ষা করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। আবার কাঁচা হলুদে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুণ। যা দাঁতের জীবনকে ধ্বংস করে এবং দাঁত ক্ষয় রোধ করে। এছাড়া ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া এবং মুখের ভিতর ক্ষত সারাতে ও কাঁচা হলুদ একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাই যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে তারা কাঁচা হলুদ খেতে পারেন।
• কাঁচা হলুদ ওজন কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ আমাদের মেদ বা ভুঁড়ি জমা থেকে বাধা দেয়। হলুদের রয়েছে এন্টি ওবেসিটি প্রপার্টি। যাদের শরীরে চর্বি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে তারা কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কাঁচা হলুদ ভাজি করে গরম ভাতের সাথে খেতে পারেন। এতে করে খেতে অনেকটা সুস্বাধু হবে।
• কাঁচা হলুদ রান্নায় তেলের অক্সিডেশন কমায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রান্না করলে তেলে অক্সিডেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার কারণে খাবারে ক্ষতিকারক পদার্থ উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা থাকে। ফলে ক্যান্সার বা বিভিন্ন রোগ ও হতে পারে থাকে।
• আপনার মুখের ভেতর যদি জ্বালাপোড়া করে তাহলে হালকা কুসুম পানির সাথে কাঁচা হলুদের গুড়ো মিশিয়ে খেতে বা কুলি করতে পারেন। তাহলে তাৎক্ষণিক আপনার মুখের জ্বালাপোড়া কমে যাবে।
• হলুদ আমাদের রক্ত শুদ্ধ করে।
• কৃমি দমনে হলুদ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনি কাঁচা হলুদের ২০-৩০ ফোটা রসের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এতে করে কৃমি জাতীয় রোগ আপনার পেট থেকে দূর হয়ে যাবে।
• আমরা সকলেই জানি যে আমাদের শরীরে জোক লাগলে আমরা সাধারণত লবণ দেই। তো আমরা লবণ না দিয়ে কাঁচা হলুদের বাটা লাগাতে পারি। এতে করে জুঁকে রক্ত খাওয়া জায়গা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণু ও মরে যাবে।
• আমাদের শরীর যদি ব্যথা করে তাহলে আমরা দুধের সাথে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারি। এতে করে আমাদের শরীরের ব্যথা নিরাময় হবে এবং শরীরে প্রোটিনের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে।
• সর্দি কাশি নিরাময়ে হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনার অতিরিক্ত মাত্রায় কাশি হয় তাহলে একটুকরো হলুদ মুখে নিয়ে চিবুতে থাকুন। এতে করে আপনার কাশি দূর হবে। এছাড়া এক গ্লাস গরম দুধের সাথে হলুদ ও গোলমরিচের গুড়ো মিশ্রন করে খেলে আরো বেশি উপকার হবে।
এই ছিল কাঁচা হলুদের বেশকিছু উপকারিতা। তো এবার চলুন দেখে আসি রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার।
রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার
ত্বক উজ্জ্বল এবং মসৃণ করতে প্রাচীনকাল থেকেই কাঁচা হলুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তো চলুন দেখে আসি কাঁচা হলুদের সেরা কিছু ফেইসপ্যাক:
• গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমে বাহিরে কাজ করলে আমাদের শরীরের চামড়া জলে যায় এবং আমরা ব্যাথা অনুভব করি। এক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ বাটা এবং টক দই ভালো ভাবে মিশ্রন করে লাগালে চামড়ার পোড়া ভাব দূর হবে এবং প্রচণ্ড গরমেও চামড়া সতেজ থাকবে।
• যাদের মুখে প্রচুর ব্রণ উঠে তাদের জন্য কাঁচা হলুদ খুবই উপকারী। মুখে ব্রণের সমস্যা দূর করতে কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে আঙ্গুর ও গোলাপের রস মিশিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগান। তারপর 30 মিনিট অপেক্ষা করুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করার ফলে মুখের ব্রণ আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবে এবং কোনো ইনফেকশন হবে না। মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করতে বাজারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট থেকে এই ফেসপ্যাকটি বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
• প্রথমে কাঁচা হলুদ বেটে রস করুন। তারপর হলদের রসের সাথে মুলতানি মাটি এবং নিম পাতার রস ভালো করে মিশ্রন করে নিন। এরপর এটি মুখে লাগান। যখন ফেসপ্যাকটি শুকিয়ে যাবে তখন গোলাপজল দিয়ে আস্তে আস্তে মুখ মাসাজ করুন। তারপর পানির সাহায্যে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে মুখ থেকে ব্রণের প্রকোপ একেবারে কমে যাবে।
• মুখের দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের সঙ্গে নিম পাতার রস ভালো ভাবে মিশ্রন করে লাগান। এটি কিছুদিন ব্যবহার করার ফলে মুখ থেকে বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হয়ে যাবে এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে।
• কাঁচা হলুদ, মসুর ডাল, মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল একসঙ্গে ভালো করে বেটে মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর এটি আপনার মুখে লাগান। এ ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে ত্বক উজ্জ্বল এবং মসৃণ দেখাবে।
• কাঁচা হলুদ ও শুকনো কমলার খোসা একত্রে বেটে মুখে লাগান। এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বকে আসবে অন্যরকম জেল্লা ও মুখে উজ্জ্বল ভাব চলে আসবে।
• চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ বেটে লাগান। কিছুদিন ব্যবহার করার ফলে আপনার চোখের নিচে থাকা কালো দাগ আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে।
• কাঁচা হলুদের সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে মুখে লাগান। এতে করে বলিরেখা দূর হয়ে যাবে।