কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি – কালোজিরার তেলের উপকারিতা
কালোজিরা এমন একটি উপাদান যেটা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য বেশি উপকারী । এই কালোজিরা ব্যবহার করে আমাদের ত্বকের এবং চুলের অসংখ্য সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু কালোজিরা থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণের উপকার পেতে হলে একে তেল বানাতে হবে তার ব্যবহার করতে হবে। যার কারণে আপনাদেরকে অবশ্যই কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি এবং কালোজিরার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আগে জানতে হবে ।
কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি – কালোজিরার তেলের উপকারিতা
যেহেতু কালোজিরার তেল বানানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং এই কালোজিরার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি তাই আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমি পাঠাকদের উদ্দেশ্যে এই কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব । আমি যেভাবে আপনাদেরকে কালোজিরার তেল বানানো শিখাব ,এইভাবে আপনারা ঘরে বসেই কালোজিরার তেল বানিয়ে নিতে পারবেন । অর্থাৎ আমি আপনাদের সাথে সম্পূর্ন ঘরোয়া পদ্ধতি শেয়ার করব।
কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি
অনেকেই আছে যারা এই কালোজিরার তেল বিভিন্ন দোকান থেকে ক্রয় করে থাকে। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা টাকার অভাবে এ ধরনের তেল গুলো কিনতে পারে না। তাদের জন্য আজকে আমি একদম ঘরোয়া পদ্ধতিতে কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দেব । চলুন ধাপে ধাপে আমরা এই কালোজিরার তেল বানানোর নিয়ম জেনে নেই।
পড়ুনঃ প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়? কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা
কালোজিরার তেল বানাতে হলে যে সমস্ত উপাদান প্রয়োজন হবে :
- সর্বপ্রথম এক চা চামচ কালোজিরা লাগবে
- এরপর এক টেবিল চামচ পরিমাণ মেথি বীজ প্রয়োজন হবে
- সাথে ২০০ মিলি নারকেল এর তেল দরকার হবে।
- নারিকেল এর তেল এর সাথে ক্যাস্টর এর তেল নিন ৫০ মিলি ।
- সবগুলো উপাদান এর সাথে একটি পরিষ্কার কাচের পাত্র ।
উপরে বলা এই চারটি বিষয় আপনার কাছে থাকলে আপনি খুব সহজে ঘরে বসে কালোজিরার তেল নিজে থেকে বানাতে পারবেন । এখন এই চারটি উপাদান দিয়ে আপনি কিভাবে কালোজিরার তেল সহজে বানিয়ে নিতে পারবেন তার পদ্ধতি নিজে বর্ণনা করা হলো:
- এখন আপনি কালোজিরা ও মেথি এই দুটি উপাদান খুব ভালোভাবে ব্লেন্ডার মেশিন দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন অথবা কোন ভাবে পিষে নিন যাতে করে এগুলো অক্ষত না থাকে এবং একদম মিহি হয়ে যায় ।
- এরপর এই অক্ষত না থাকা গুড়াগুলো আপনার নেওয়া পরিষ্কার কাচের বাটিতে অথবা কোন পাতিলে নিন । পাতিলে নেওয়ার পর ৫০ মিলি ক্যাস্টর তেল এবং আপনার নেওয়া ২০০ মিলি নারিকেলের তেলগুলো ভালোমতো মিশিয়ে এগুলো একসাথে মিক্সার করে নিন ।
- আর হ্যাঁ আপনি যে পাত্রটিতে এই উপাদানগুলো নিয়ে মেশাবেন অবশ্যই সেই পাত্রটির ঢাকনা থাকতে হবে কারণ এখন আপনাকে এই পাত্রটির ঢাকনা দিয়ে মুখ বন্ধ করে সূর্যের আলোতে রেখে দিতে হবে ।
- এভাবে উপাদানগুলো পাতিলে নিয়ে সেই পাতিলের ঢাকনা বন্ধ করে সূর্যের আলোতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ রেখে দিন।
- তেলগুলো ভালো মতো উৎপাদন হওয়ার জন্য প্রতি ২ দিন পর পর ঢাকনা খুলে পরিষ্কার কোন জিনিস দিয়ে তেল গুলো নাড়িয়ে দিন ।
উপরে বলা নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ কালোজিরার তেল উৎপাদন করতে পারে তাহলে তারা তেল থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে উপকার পাওয়া সম্ভব হবে। আশা করি আপনারা কালোজিরার তেল বাড়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন।
কালোজিরার তেলের উপকারিতা
বন্ধুরা কালোজিরার তেল একটি উপাদান যেটা বিভিন্ন ধরনের ভালো ভালো কসমেটিকস পণ্যের ভিতর ব্যবহার করা হয়ে থাকে । জানলে অবাক হবেন বিভিন্ন ফেস প্যাক, ফেস মাস্ক এবং লোশন এর মধ্যেও এই কালোজিরার উপাদান টি ব্যবহার করে । তাহলে বুঝতেই পারছেন একটি কালোজিরা উপাদান কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
এই কালোজিরার তেল আমাদের চুলের জন্য যেমন উপকারী ঠিক একইভাবে আমাদের শরীরের ত্বকের জন্য ও অনেক বেশি উপকার করে থাকে । এখন নিচে আমি এই কালোজিরার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু উপায় আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম।
চুলের জন্য কালোজিরা তেলের উপকারিতা
মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক বলা হয় চুলকে । চুল যদি আপনার ঠিক না থাকে তাহলে এখানে আপনার সৌন্দর্য অনেকটা নষ্ট হয়ে যাবে । কিন্তু এই কালোজিরার তেলের ব্যবহারে বলে আপনি চাইলে আপনার চুলকে অনেক বেশি ভালো রাখতে পারবেন । কালোজিরার তেলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের চুলের জন্য অনেক বেশি উপকার করে থাকে এবং আমাদের চুলকে সতেজ রাখে ।
কালোজিরা তেল ব্যবহারের ফলে মানুষের চুলের যে সমস্ত উন্নতি হয় তা অকল্পনীয় । এই কালোজিরার তেল ব্যবহার ফলে আমাদের চুলের যে পুষ্টিগুণ দরকার সেগুলো খুব সহজে পূরণ হয়ে যায় । সমগ্র মানবজাতির নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই কালোজিরার তেল তার চুলে নিয়মিত ব্যবহার করতেন । এই কালোজিরার তেল ব্যবহারের ফলে যদি কারো চুল পড়া সমস্যাটি থেকে থাকে তার সমস্যাটি খুব সহজে সমাধান হয়ে যাবে ।
এটি ব্যবহার করলে যাদের মাথায় অনেক বেশি খুশকি থাকে সেই খুশকিও দূর হয়ে যাবে । যাদের মাথার চুল একদম পাতলা তারা যদি নিয়মিত এটি ব্যবহার করতে পারে তাহলে তাদের চুল নতুন করে গজানোর সম্ভাবনা থাকে । এছাড়াও আপনার চুল যদি অনেকটা খাট হয়ে থাকে এবং আপনি আপনার চুলকে লম্বা করতে চাচ্ছেন তাহলেও এই কালোজিরার তেল ভূমিকা রাখতে পারবে। এগুলো ছাড়াও চুলের যে সমস্ত প্রোটিন দরকার হয় সেগুলোর যোগান দিতে কালোজিরার ভূমিকা অনেক বেশি। আশা করি আপনারা এই চুলের ক্ষেত্রে কালোজিরার তেলের উপকারিতা ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন ।
পড়ুনঃ কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি? বিস্তারিত জানুন
মানুষের ত্বকের জন্য কালোজিরার তেলের উপকারিতা
চুলের জন্য কালোজিরার তেল যতটা বেশি উপকার করতে পারে তার থেকে অনেক বেশি উপকার করতে পারে এই ত্বকের জন্য । আমাদের শরীরের ত্বককে সুস্থ রাখার জন্য অনেক বেশি ভিটামিনের প্রয়োজন পড়ে আর এই কালোজিরার তেলে তার সবগুলো ভিটামিনের কোন উপস্থিত আছে । অর্থাৎ এই তেলোই আমাদের শরীরের ত্বকের সুস্থতার জন্য যে সমস্ত উপাদান দরকার সবগুলো পূরণ করতে সক্ষম ।
মানুষের ত্বকের অনেক ধরনের সমস্যা থাকে সেগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ত্বক পুড়ে যাওয়া ত্বকে ব্রণ সৃষ্টি হওয়া ত্বকে বিভিন্ন ধরনের কালার দাগ হওয়া এ ছাড়াও ত্বকে এলার্জি সমস্যা গুলো থেকে যায় । তবে কালোজিরার মধ্যে এমন কিছু এন্টিঅক্সিডেন্ট পদার্থ বিদ্যমান যেগুলো এই ধরনের সমস্ত সমস্যাগুলোকে নিমিষেই ঠিক করে দিতে সক্ষম । তাই আপনাদের ত্বকে যদি এই ধরনের পুড়ে যাওয়া বা ত্বকে গর্ত হয়ে যাওয়া ত্বকে কালো দাগ হয়ে যায় তাহলে নিয়মিত কালোজিরার তেল ব্যবহার করুন নিশ্চয় এগুলো থেকে মুক্তি পাবেন না।
সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
উপরে এতক্ষণ আমরা কালোজিরার তেলের উপকারিতা এছাড়াও কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদেরকে যথেষ্ট ইনফরমেশন দেওয়ার চেষ্টা করেছি । কিন্তু বন্ধুরা মধু ও কালোজিরা যদি একসাথে খেতে পারেন নিয়মিত তাহলে এখান থেকে আরো অনেক বেশি উপকৃত হবেন যেটা আপনি ভাবতেও পারবেন না । মধু এমন এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যেটার মধ্যে হাজার হাজার পুষ্টিগুণ উপস্থিত।
যেহেতু কালোজিরা একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং মধু ও একটি প্রাকৃতিক উপাদান তাই এই দুটি প্রাকৃতিক উপাদান মিক্সার করলে আমরা নতুন যে মিশ্রণটি পাবো সেটিও একটি প্রাকৃতিক উপাদান হবে। কালোজিরাতে রয়েছে হাজার হাজার পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান এবং মধুতেও রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণ উপকারী উপাদান তাই এই দুটি মিশ্রণ যখন আমরা গ্রহণ করবো তখন আমাদের শরীরের উপর অনেক ভালো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ।
আর হ্যাঁ সকাল বেলা আমাদের শরীর সব থেকে বেশি ভালো অবস্থানে থাকে অর্থাৎ সারা রাত ঘুম হওয়ার পর যখন আমাদের শরীর নতুন করে রিচার্জ হয় এবং সকালে আমরা উঠি, তখন আমাদের শরীর এমন এক পর্যায়ে আসে এবং এই পর্যায়ে যদি আমরা শরীরকে ভালো কিছু দিতে পারি তাহলে শরীরও আমাদেরকে সব থেকে বেশি আউটপুট দিতে সক্ষম হবে । ডাক্তাররা দেখবেন সবসময় সকালবেলা মানুষকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকে কারণ সকাল বেলা ব্যায়াম করলে সেটি আমাদের শরীরের জন্য বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে ।
ঠিক এই কারণে আমরা যখন কালোজিরা এবং মধু মিশিয়ে সকালবেলা আমাদের শরীরকে দিতে পারব। তখন আমাদের শরীর সেরা খুব সহজে সেগুলো গ্রহণ করবে এবং এই উপাদান গুলোর মধ্যে থাকা ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ গুলো আমাদের শরীর খুব সহজে শারীরিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হবে। তো আপনি সকালবেলা দুই চামচ পরিমাণ মধু এবং নির্দিষ্ট পরিমাণের কালোজিরা মিশিয়ে খালি পেটে এটি গ্রহণ করবেন । এইভাবে আপনি প্রতিদিন কাজটি করতে থাকলে একসময় দেখবেন আপনার শরীরের যে যাবতীয় অসুখগুলো ছিল সেগুলো নিজে থেকে ঠিক হয়ে যাবে।
এছাড়াও যদি সকালবেলা এই কালোজিরা এবং মধু সঠিকভাবে নিয়মিত গ্রহণ করা যায় তাহলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি পায় । শুধু এটা ছাড়াও সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা আরো অনেক বেশি রয়েছে , আর এই উপকারটা আপনি তখনই বুঝতে পারবেন যখন আপনি নিয়মিত এই কাজটি করতে থাকবেন । আমাদের শরীর কে সুস্থ সবল রাখতে প্রতিনিয়ত শরীরের নতুন নতুন ভিটামিন ,আমিষ শর্করা জাতীয় উপাদান গুলো প্রয়োজন হয় । কিন্তু আমাদের এত পরিমাণ সামর্থ্য নেই যে আমরা প্রতিদিন আমাদের শরীরকে সব ধরনের উপাদান দিতে পারি । তবে যদি আমরা প্রতিদিন খালি পেটে সকালবেলা মধু এবং কালোজিরা মিশিয়ে খেতে পারি তাহলে এই সমস্ত উপাদানগুলোর ঘাটতি একেবারে পূরণ হয়ে যাবে এবং আমরা খুব সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবো ।
পরিশেষঃ কালোজিরার তেলের উপকারিতা
আজকের পোস্টে আমি কালোজিরা এবং কালোজিরার তেল নিয়ে যাবতীয় ইনফরমেশন গুলো সুন্দরভাবে সহজ ভাষায় আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি । প্রত্যেক পোস্টের শেষে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি , কোন জিনিসের অতিরিক্ত ব্যবহার ভালো নয় । তাই আপনি কখনোই কাজগুলো মাত্রা অতিরিক্ত করবেন না। তবে কালোজিরা যেহেতু একটি প্রাকৃতিক উপাদান তাই এটি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন এতে করে কোন সমস্যা হবে না ।
আর কালোজিরার মধ্যে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরে কোন ক্ষতি সাধন করে না । তবে যাদের শরীরে এলার্জি আছে তারা কালোজিরার তেল ব্যবহার থেকে একটু বিরত থাকার চেষ্টা করবেন । কারণ এলার্জি যুক্ত ত্বকে এই কালোজিরার তেল প্রবেশ করলে সেটা একটু সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমি আশা করতে পারি আজকের পোস্টে আমি এই কালোজিরার তেল বানানোর পদ্ধতি এবং কালোজিরার তেলের উপকারিতা সহ যে সমস্ত পয়েন্ট আলোচনা করেছি সেগুলো প্রত্যেকটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন । তবে হ্যাঁ যদি কোন পয়েন্ট বা কোন লেখা আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ ।