দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা – দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ
কৃষি প্রেমী সকল ভাই ও বোনদের কে আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম। আপনারা যদি দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা এছাড়াও দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ এর নাম সম্পর্কে জানার ইচ্ছা হয়ে থাকে। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন, কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা সহ দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ এছাড়াও দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আমাদের দেশে যদিও বিভিন্ন প্রকারের মুরগি পাওয়া যায় কিন্তু এগুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু হচ্ছে দেশি মুরগি। তবে এই দেশি মুরগি লালন পালন করতে গিয়ে আমাদের মুরগি গুলোর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায় যার কারনে আমাদেরকে দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা সম্পর্কে জানা থাকতে হবে।
তাই যদি আপনার দেশি মুরগির ও অনেক সময় অসুখ হয়ে থাকে তাহলে আজকের এই দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা টি দেখে নিন, আশা করি যদি আপনি আমার বলা দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা অনুযায়ী আপনার মুরগিগুলোকে সেবা প্রদান করেন তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।
দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা বিস্তারিত
দেখুন বন্ধুরা যদি আপনি দেশি মুরগির খামার ভালোভাবে পরিচালনা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে গ্রাম গঞ্জ থেকে বড় দেখে ডিম পাড়া মুরগিগুলো সংগ্রহ করতে হবে । এই মুরগি গুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা নাও থাকতে পারে এবং কোনো কোনো মুরগি ক্রিমি আক্রান্ত থাকতে পারে ।
আর এই আক্রান্ত মুরগিগুলোকে যদি আপনি আপনার খামারে একবারে প্রবেশ করিয়ে দেন তাহলে কিন্তু অন্যান্য মুরগিগুলো সেখানে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে । তাই আপনার উচিত দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা টা দেখে নিয়ে আপনার মুরগিগুলোকে ভালোমতো ট্রিটমেন্ট করে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করে তবেই খামারে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া।
দেশি মুরগি কেনার পরে সেগুলোকে আগে সাত দিন পর্যন্ত আলাদা স্থানে বদ্ধ করে রাখতে হবে । এটাকে আমরা কোয়ারেন্টাইন বলতে পারি। মুরগিগুলোকে আলাদা রাখা অবস্থায় দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা থেকে আমার বলা পদ্ধতি অনুযায়ী সেগুলোকে ঔষধ প্রদান করে তারপর তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার পর আপনি চাইলে সেগুলো কে সবগুলো মুরগীর সাথে সংযুক্ত করতে পারেন ।
মুরগি কিনে আনার পর দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা +
মুরগি করাই করার পর প্রথম দিন থেকে ২৫তম দিন পর্যন্ত আপনারা যেভাবে দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা নির্বাচন করবেন সেটা নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে হতে পারে।
১ম দিন+
মুরগি আলাদা স্থানে রাখার পর প্রথম দিনে আপনাকে কয়েকটি ওষুধ খাওয়াতে হবে । সেটা হচ্ছে স্যালাইন জাতীয় খাবার এবং লাইসোভিড গ্রুপের ঔষধ ।
২য় থেকে ৪র্থ দিন
এই সময় আপনাকে মুরগিগুলোর দিকে খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে কারণ সেগুলো বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে । এ সময় মুরগিগুলোকে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিভিটামিন জাতীয় ঔষধ প্রদান করতে হবে। তবে যদি দেখেন যে মুরগিগুলো অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলোকে এন্টিবায়োটিক প্রদান করা যেতে পারে ।
৫ম দিনের দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা +
এই পঞ্চম দিনে এসে মুরগিগুলোর পায়খানা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে দেখতে হবে যে সেগুলো তে ক্রিমি আক্রান্ত হয়েছে কিনা । যদি দেখে মনে হয় কৃমি আক্রান্ত হয়েছে তাহলে কৃমির ভালো ডোজ দিতে হবে আর যদি দেখা যায় ক্রিমি আক্রান্ত হয় নাই তবুও কৃমির সাধারণ ডোজ দিতে হবে ।
৬ থেকে ৮ নম্বর দিন
যখন মুরগিগুলোর কোয়ারেন্টাইন ষষ্ঠ দিনে এসে পৌঁছাবে তখন আপনাকে এই দেশি মুরগির ঔষধের তালিকায় যে ঔষধ গুলো লিভার টনিক গ্রুপের সেই ধরনের ঔষধ গুলো প্রদান করতে হবে । আর অবশ্যই এই ঔষধ গুলো ছয় থেকে আট নম্বর দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে ।
৯ম দিনে – দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ
প্রথম থেকে অষ্টম দিনের দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা টি প্রয়োগ করার পর নবম দিনে এসে মুরগিগুলোকে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে যদি দেখে মনে হয় সেগুলো অসুস্থ তাহলে অবশ্যই ভ্যাটেরেনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে । এবং অবশ্যই সেগুলোকে রানীক্ষেত এর ভ্যাকসিন দিতে হবে ।
১৫ তম দিনের দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা
এই সময়টা মুরগীর জন্য আরো অত্যন্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সময়ে মুরগিগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোকে ফাউল পক্স জাতীয় ভ্যাকসিন গুলো প্রয়োগ করতে হবে ।
২৫তম দিন
দেখুন এই দিনে এসে আপনাকে মুড়গী গুলো আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে যদি সবগুলো সুস্থ থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি কোন ধরনের সমস্যা দেখতে পান তাহলে অবশ্যই ডাক্তার এর শরণাপন্ন হবেন ।
বন্ধুরা আমরা উপরে মুরগি কেনার পর প্রথম থেকে ২৫ তম দিনের দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা প্রদান করেছি । আমাদের এই তালিকাটি শুধুমাত্র সেই সকল মুরগিদের জন্য যে মুরগিগুলো প্রাপ্তবয়সক নিয়ে এসেছেন এবং গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন এই মুরগি গুলোকে উপরের দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা অনুযায়ী সেবা প্রদান করতে পারেন ।
যদি আপনি কোন বাচ্চা বা অন্য জাতের মুরগী নিয়ে আসেন তাহলে অবশ্যই তার ওষুধের তালিকা ভিন্ন হবে । আর হ্যাঁ আমাদের বর্ণিত দেশি মুরগির ঔষধের তালিকাটি সম্পূর্ন ফিক্সড নয় । পরিবেশ এবং পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এই তালিকাটি পরিবর্তন হতে পারে তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ
বন্ধুরা আমি আশা রাখতে পারি আপনারা ইতিমধ্যেই দেশি মুরগির ঔষধের তালিকাটি পেয়েছেন কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ এর প্রয়োজন পড়ে। এই ঝিমানো রোগটি প্রায় অনেক মুরগির ক্ষেত্রেই দেখা যায় ।
এই রোগটিকে রানীক্ষেত রোগ ও বলা হয় । আর এই ধরনের রোগকে সাধারণত ভাইরাস ঘটিত রোগ বলা হয়ে থাকে । যখন এই ঝিমানো রোগ হয় তখন মুরগি পাতলা পায়খানা করতে থাকে ,এবং দিনের বেশিরভাগ সময় চোখ বন্ধ করে থাকে এছাড়াও আরো পাগলের মতো আচরণ করতে পারে । এরকম করতে করতে মুরগিটি একপর্যায়ে মারা যায় ।
যেহেতু এই রানীক্ষেত রোগটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ তাই সাধারণত এই ধরনের রোগের নির্দিষ্ট কোন ঔষধ থাকে না । অর্থাৎ দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ এর নির্দিষ্ট কোন ডোজ নেই তবে বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন এবং টিকা প্রয়োগ করে এই রানীক্ষেত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
মুরগির ঝিমানো রোগ হলে সাধারণত বিসিআরডি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয় । আর দেশি মুরগির ওষুধের তালিকায় আমরা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ঔষধ যুক্ত করতে পারি । সব থেকে কার্যকরী হচ্ছে আপনার মুরগি বাচ্চা অবস্থা থেকেই এই ট্রিটমেন্টগুলো দিতে হবে তাহলে পরবর্তীতে এসে আর ঝিমানো রোগ দেখা যাবে না । এরমধ্যে মুরগিকে ছোটবেলা থেকেই বিসিআরডি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে এবং ভিটামিনযুক্ত খাদ্য প্রদান করতে হবে।
দেশি মুরগির ঔষধের তালিকার মধ্যে দেশি মুরগির বাচ্চা ঝিমানো ঔষধ
আপনারা ওপরে দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে এসেছেন। যদিও দেশি মুরগির বাচ্চা ঝিমানো ঔষধ এর নির্দিষ্ট কোন ডোজ নেই । তবে ঝিমানো রোগ দেখা দিলে আপনারা ভিটামিন জাতীয় বিভিন্ন ধরনের ভেট প্রয়োগ করতে পারেন এছাড়াও ছোটবেলা থেকেই মুরগিগুলোকে বিসিআরডি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যেতে পারে ।
যদিও এই রোগ গুলো সাধারণত কোন ঔষধ হয় না তবে ছোটবেলা থেকেই ট্রিটমেন্ট দিলে পরবর্তীতে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় ।
দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ
বন্ধুরা এখন আমরা দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে একটু আইডিয়া নেব। উপরে যদিও দেশি মুরগির ঔষুধের তালিকা প্রদান করা হয়েছে কিন্তু দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
যদি আপনি দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের এই লেখাগুলো পড়ুন । দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই তবে দেশি মুরগির শরীরে গোস্ত বৃদ্ধির জন্য এর লিভারের কার্যক্রম ঠিক রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । যদি আপনি লিভারের কার্যক্রম ঠিক রেখে এদেরকে সঠিকভাবে খাবার প্রদান করতে পারেন তাহলে অবশ্যই দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধি হবে ।
তো দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ বা লিভারের কার্যক্রম ঠিক রাখতে হলে মুরগি গুলোকে লিভার টনিক ঔষধ প্রদান করতে হবে । যদিও আমরা দেশি মুরগির ঔষধের তালিকায় এই ওষুধের নামটি বলেছি ।
লিভার টনিক ঔষধ খাওয়া হয়ে গেলে আপনারা মুরগিগুলোকে কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে পারেন তাহলে লিভারের কার্যক্রম আরো দৃঢ় হবে । এরপর বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করালে আশা করি আপনাদের মুরগির ওজন বৃদ্ধি পাবে ।
পরিশেষে
জীবন মরণ আল্লাহর হাতে । তবুও আমাদের মুরগিগুলোকে সুস্থ সবল রাখতে হলে দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা অনুযায়ী ঔষধ প্রদান করা আবশ্যক । এরই উদ্বেগে আমরা আজকের পোস্টে দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা সহ দেশি মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ সহ আরো একটি টপিক আলোচনা করেছি সেটা হল দেশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ ।
যদি এই বিষয়বস্তুগুলো বুঝতে কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন অথবা চাইলে আমাদের ফেসবুক পেইজে মেসেজ করেও সাহায্য পেতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর চাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করে ওয়েবসাইটের পাশে থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম ।