কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি? বিস্তারিত জানুন
আপনি যদি কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে থাকেন । তাহলে বন্ধুরা আপনি সঠিক পোস্টে চলে এসেছেন । কারণ আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা পাঠকদের উদ্দেশ্যে এই কালোজিরা চিবিয়ে খাবার উপকারিতা কি প্রশ্নটির উত্তর খুব সুন্দর ভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দিয়ে দেবো । তাই যদি আপনি কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি বা কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেতে চান তাহলে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত ।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি?
কালোজিরা একটি মসলা জাতীয় ফসল । তো এই মসলাটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী । আপনি ভাবতেও পারবেন না কালোজিরা আমাদের শরীরের কতটা উপকার করে । যাই হোক আমরা নিচে এই কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরলাম যেগুলো পড়লে আপনি খুব সহজে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারীতা উপকারিতা কি এই প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে যাবেন । চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
পড়ুনঃ সাত দিনে মোটা হওয়ার উপায় | মোটা হওয়ার ঔষধের নাম জানতে চান?
১. মাথা ব্যাথা নিরাময়ে
আপনি যদি নিয়মিত মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এই কালোজিরাই পারে আপনার সমস্যাটিকে সমাধান করে দিতে। প্রতিদিন ১/২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় লাগাতে হবে । এবং এক চামচ কালোজিরা নিবেন এবং সমপরিমাণে মধু নিবেন এবং এই দুইটা মিক্সার করে দিনে ২-৩ বার খাবেন। এইভাবে যদি আপনি দুই থেকে তিন সপ্তাহ কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার মাথা ব্যাথা দূর হয়ে যাবে ।
২. বাতের ব্যাথা দূর করতে:
বর্তমান যুগে প্রাই বেশিরভাগ মানুষেরই এই বাত ব্যথার সমস্যা রয়েছে । এদের মধ্যে যদি আপনিও হয়ে থাকেন তাহলে আপনি চাইলে কালোজিরা ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার সমস্যাটি অনেকাংশে কমিয়ে নিতে পারবেন । যে স্থানে আপনার বাতের ব্যথা রয়েছে প্রথমে সেই স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেবেন । পরিষ্কার করে সেখানে নিয়মিত কালোজিরার তেল মালিশ করুন । এছাড়াও কাঁচা হলুদের গুরার সাথে এক চামচ কালোজিরা এবং সাথে সমপরিমাণ মধু নিবেন নিয়ে মিক্সার করে দুই তিন সপ্তাহ খেলে আরো ভালো উপকার পাবেন ।
৩. স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিঃ
আপনারা চাইলে আপনাদের স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করতেও এই কালোজিরা ব্যবহার করতে পারবেন তো এটি ব্যবহারের নিয়মটা আমি নিচে দিয়ে দিলাম ।
প্রথমে এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস অথবা কমলার রস অথবা চাইলে এক কাপ রং চা এর সাথে এক চামচ কালোজিরা তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন এবং এটি দিনে তিন থেকে চারবার গ্রহণ করবেন । যদি আপনি এই কাজটি করেন তাহলে আপনি টেনশন থেকে মুক্তি পাবেন এছাড়াও আপনার স্মরণ শক্তি আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি করতে এটি সাহায্য করবে । কারণ এই কালোজিরা খাওয়ার ফলে আপনার ব্রেনের ভিতর রক্ত চলাচল বেড়ে যাবে এবং ব্রেনের নার্ভ গুলো দ্রুত একটিভ হবে ।
৪. সর্দি কাশি জ্বর ভালো করতে:
অনেকেই আছেন যাদের নিয়মিত সর্দি হয়ে থাকে, তো আপনারা চাইলে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে আপনাদের সর্দি কাশি বা জ্বর এধরনের রোগ সারিয়ে তুলতে পারবেন। তার জন্য রং চা বা মধুর সাথে ১ চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক তিন থেকে চারবার খেতে হবে । আর হ্যাঁ এই দ্রবনটি খাওয়ার পাশাপাশি আপনার মাথা এবং ঘাড়ে মালিশ করতে হবে যতদিন পর্যন্ত আপনার রোগ না সেরে উঠছে । আর হ্যাঁ যদি আপনি এক চামচ কালোজিরা তেল এর সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে সেটা আরো বেশি উপকার হবে । এবং খুব তাড়াতাড়ি আপনার জ্বর সর্দি এবং কাশি রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করবে ।
৫. হার্টের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে:
হার্টের রোগ বর্তমানে কমন একটি রোগ প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই এই রোগটি হয়ে থাকে । তবে যাদের বেশি বয়স হয়েছে তাদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায় । তবে আপনি যদি এক চামচ কালোজিরার তেল এর সাথে এক কাপ দুধ মিশিয়ে দৈনিক তিন থেকে চারবার গ্রহণ করতে পারেন এবং কাজটি কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত করতে পারেন তাহলে আশা করি আপনার হার্টের রোগ কিছুটা উপশম হবে ।
৬. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে:
সবাই জানলে অবাক হবেন কালোজিরা চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের রাখা সম্ভব। তবে এর জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে । আপনি যদি আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে উঠে এক চিমটি পরিমাণে কালোজিরা এক গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিবেন । তবে হ্যাঁ অবশ্যই পানিগুলো খালি পেটে খাওয়ার চেষ্টা করবেন । এছাড়াও যদি আপনি রং চা কিংবা প্রতিদিন ভাতের সাথে কালিজিরা চিবিয়ে খান তাহলে নিশ্চয় ডায়াবেটিক্স অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ।
৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে:
যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে এছাড়াও তাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে দুই ধরনের রোগী এই কালোজিরার মাধ্যমে উপকার পাবেন । তবে এর জন্য আপনাকে খুব করা নিয়ম মেনে চলতে হবে । নিয়মটা হচ্ছে প্রতিদিন সকালে উঠবেন তারপর রসুনের দুইটি কুয়া চিবিয়ে খাবেন তারপর কালোজিরা এর তেল আপনার সম্পূর্ণ শরীরে লাগাবেন তারপর আপনি এই অবস্থায় সকালে সূর্যের তাপে ৩০ মিনিটের মত নিজের শরীরকে রাখবেন ।
এই কাজটি করার পাশাপাশি অবশ্যই এক চামচ কালোজিরার তেল এর সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার খাবেন এবং এই কাজটি কয়েক সপ্তাহ ধরে করলে আশা করি আপনার রক্তচাপ আগে থেকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে আসবে ।
৮. বুকের দুধের শুন্যতা সমস্যায়:
বলা হয়ে থাকে কালোজিরা কে দুধের মহা ঔষধ বলা হয় । যদি আপনি গ্রাম অঞ্চলের মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই দুধের চিকিৎসায় কালোজিরার ব্যবহারের কথা শুনে থাকবেন । এছাড়াও দেখবেন আগেরকার মানুষ তাদের গাভীর দুধ বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা ব্যবহার করে চিকিৎসা করতো । তো বন্ধুরা কোন মেয়ের যদি বুকের দুধ কম আসে তাহলে সে যেটা করতে পারে সেটা হল- প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা নিয়ে সেটা বেটে নেবে এবং তারপর দুধের সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিবে । এভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন নিয়মিত খেলে আশা করি অটোমেটিক দুধ চলে আসবে। ।
৯. শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগের চিকিৎসায়
অনেক সময় ডাক্তাররা রোগীদের শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানি রোগ হলে এই কালোজিরা ব্যবহার করে চিকিৎসা করে থাকে । কারণ হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী একটি ফল । তো আপনি শ্বাসকষ্টের জন্য কালোজিরা ব্যবহার করতে চাইলে প্রতিদিন খাবারের সাথে কালোজিরার ভর্তা রাখুন । নিয়মিত কালোজিরার ভর্তা সেবন করলে আশা করি আপনার হাঁপানি রোগ কিছুটা উপশম্য হবে ।
১০. শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বৃদ্ধিতে:
অনেক সময় দেখা যায় শিশুদের বিভিন্ন কারণে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটতে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে । এবং এই সমস্যার কারণে অনেক সময় শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটানো এমনকি অল্প বয়সে শিশুদের মৃত্যু ঘটে থাকে । তো এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি চাইলে আপনার দুই বছরের বেশি বয়সের শিশুকে কালোজিরা ব্যবহার করে চিকিৎসা করতে পারেন ।
পড়ুনঃ এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় | চুলকানির ট্যাবলেট এর নাম | চুলকানি দূর করার ক্রিম
এর জন্য আপনি আপনার দুই বছরের বেশি বয়সের শিশুকে প্রতিদিন নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া শিখাবেন । যদি সে নিয়মিত এই কালোজিরা সেবন করতে থাকে তাহলে অবশ্যই তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ দূর করতে থাকবে। আর হ্যাঁ কখনোই দুই বছরের বয়সের নিচে কোন শিশুকে কালোজিরা তেল বা কালোজিরা খাওয়াবে না বা খাওয়ানোর অভ্যাস পারবেন না কারণ এতে করে তাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে ।
১১. আমাশয় নিরাময় করতে:
আগেকার দিনে আমাশয় নিরাময়ে শুধুমাত্র এই কালোজিরা ব্যবহার করা হতো । কারণ কারো আমাশয় হলে কালোজিরা তার আমাশয় ঠিক করতে অনেক বেশি সাহায্য করতে পারে । আপনার দাদি কিংবা নানী থেকে শুনে দেখবেন তাদের সময় আমাশয় হলে এই কালোজিরা ব্যবহার করে রোগীর বেশিরভাগ চিকিৎসা করা হতো । তো এর জন্য আপনারা এক থেকে দুই চামচ কালোজিরার তেল, মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার খাবার অভ্যাস করবেন । এই কাজ নিয়মিত কয়েক দিন করতে পারলে আশা করি আপনার আমাশয় অনেকটাই কমে যাবে ।
১২. অনিয়মিত মাসিক ঠিক করতে:
মা ও বোনদের অনেক পরিচিত একটি সমস্যা হচ্ছে অনিয়মিত মাসিক হওয়া । আর এই সমস্যার কারণে অনেকেই অনেক ভাবে ওষুধ খেয়ে ঠিক করতে চায়। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়ার ফলেও তাদের সমস্যাগুলো সমাধান হয় না ।তো যদি কারো এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তারা চাইলে কালোজিরা খাওয়ার মাধ্যমে তাদের মাসিকের সমাধান করে ফেলতে পারে । আপনারা নিয়মিত ভাতের সাথে কালোজিরা খাওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে আশা করছি আর এ ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে না ।
পরিশেষে:
বন্ধুরা কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি এই প্রশ্নের উত্তর আমরা ১২টি পয়েন্ট দিয়ে দিয়েছি। আপনারা এখানে প্রায় প্রত্যেকটি অসুখের কথা দেখতে পেরেছেন । অর্থাৎ প্রায় সব ধরনের অসুখ সেরে ফেলা সম্ভব শুধুমাত্র এই কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমেই।
আগে বলেছিলাম কালোজিরা হচ্ছে সব রোগের মহা ঔষধ । এই কালোজিরা এমন একটি উপাদান যেটা খেলে কখনোই কারো শরীরে কোন ধরনের ক্ষতি হবে না । আপনারা চাইলে নিয়মিত এই কালোজিরা সেবন করতে পারেন তাহলে আশা করছি অনেক ধরনের অসুখ থেকে সুস্থ হতে পারবেন । আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন যে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি। যদি এই সম্পর্কে আপনাদের মনে আর কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।
You have to wait 62 seconds. Generating next Post Link…( 1 no. Post)
|