চার কুল সূরা ও চার কুল পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত
আসসালামু আলাইকুম; আপনি কি চার কুল সূরা ও চার কুল পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? তাহলে আজকের পোস্ট অবশ্যই শেষ পর্যন্ত সুন্দর ভাবে পড়বেন।
চার কুল সূরা | চার কুল পড়ার নিয়ম | চার কুল বাংলা উচ্চারণ
এই পোস্টে আমরা চার কুল সূরা কি কি এবং চার কুলের ফজিলত সহ এই চার কুল পড়ার নিয়ম এবং 4 kul সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়বস্তুগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
পড়ুনঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়েদেনা মোহাম্মদ অর্থ ও মিলাদ পড়ার নিয়ম |
চার কুল সূরা | 4 kul surah
পবিত্র কুরআনে 100 এর অধিক সূরা আছে । এর মধ্যে বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন ধরনের ফজিলত আছে এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় । এর মধ্যে অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে 4 kul.
হাদিসে এই চার কুল সম্পর্কে অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। তো চার কুল মানে হচ্ছে পবিত্র কুরআনের অনেক ফজিলতপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ চারটি সূরা । আর সেগুলো হলো:
✓ সূরা কাফিরুন
✓ সূরা নাস
✓ সূরা ফালাক
✓ সূরা ইখলাস
বিভিন্ন হক্কানী আলেমদের মাঝেও এই চার কুল এর প্রচলন রয়েছে ।
চার কুল সূরা ও চার কুল বাংলা উচ্চারণ
চার কুল সূরা কি কি সেটা আমরা জেনে এসেছি। নিচে এখন আমরা এই চার কুল বাংলা উচ্চারণ এবং এই চার কুল সূরা সমূহ দেখে নেব ।
উচ্চারণ | সূরা নাস |
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুল আ’উযু বিরাব্বিন নাস। মালিকিন নাস। ইলাহিন নাস। মিন শাররিল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস। আল্লাযী ইউওয়াসবিসু ফিস ছুদুরিন্নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস। |
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (۱) مَلِكِ النَّاسِ (۲) إِلَهِ النَّاسِ (۳) مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ (۴) الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ (۵) مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ (۶ |
উচ্চারণ | সূরা ফালাক |
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুল আ’ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব। মিন শার-রিমা খালাক্ব। অমিন শাররি গ-সিক্বিন ইযা-অক্বাব। অমিন শাররি ন্নফ্ফা-সা-তি ফিল উক্বদ। অমিন শাররি হা-সিদিন ইযা-হাসাদ। |
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (۱) مِن شَرِّ مَا خَلَقَ (۲) وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (۳) وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ (۴) وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (۵ |
উচ্চারণ | সূরা ইখলাছ |
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লা-হুসসামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়া কুল্লা-হু কুফুওয়ান আহাদ। |
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (۱) اللَّهُ الصَّمَدُ (۲) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (۳) وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ (۴ |
উচ্চারণ | সূরা কাফিরূন |
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন। লা তা’বুদু মা তা’বুদ। ওয়ালা আনতুম আ’বিদুনা মা আ’বুদ। ওয়ালা আনা আ’বিদুম্মা আবাত্তুম। ওয়ালা আনতুম আ’বিদুনা মা আ’বুদ। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বীন। |
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ (۱) لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ (۲) وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ (۳) وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ (۴) وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ (۵) لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِين (۶ |
চার কুল পড়ার নিয়ম | 4 kul porar নিয়ম
বন্ধুরা চার কুল সূরার যেহেতু অনেক বেশি ফজিলত তাই এটি আমাদেরকে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে পড়তে হবে। অর্থাৎ এর জন্য আপনাদেরকে সুন্দর ভাবে চার কুল পড়ার নিয়ম বুঝতে হবে।
বিভিন্ন হাদিস থেকে পাওয়া যায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূরা কাফিরুন কে ঘুমানোর আগে পড়তে বলেছেন। কারণ এই সুরা কাফিরুন পড়লে মানুষের মন থেকে শিরক দূর হয়ে যায় ।
পড়ুনঃ জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত | জুমার দিনে মহিলাদের আমল |
এছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের মধ্যে সুরা নাস ও সূরা ফালাক তেলাওয়াত করার কথা বলেছেন আর তিনি নিজেও এই দুইটি সূরা বিভিন্ন নামাজে অনেক বেশি বেশি পড়তেন।
যখন আপনারা বিভিন্ন বিপদ-আপদে পড়বেন তখন ও আপনারা এই সূরা ফালাক ও সূরা নাস সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করবেন।
সূরা ফালাক ও সূরা নাস এই দুইটি সূরা এমন একটি সূরা যেটি আমল করলে মানুষের জাদু-টোনা এবং বিভিন্ন খারাপ এর আক্রমণ থেকে বেঁচে যাবে। তাই আপনারা নিয়মিত অবশ্যই সূরা নাসও সূরা ফালাক তেলাওয়াত করবেন।
সূরা ইখলাস এর মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালার নিজের সম্পর্কে সমস্ত বিষয়বস্তু উল্লেখিত রয়েছে । তাই এই সূরার ফজিলত সবথেকে বেশি। এই সূরার তেলাওয়াত করার মানে হচ্ছে আপনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করছেন। তাই অবশ্যই অবসর সময়ে সূরা ইখলাস বেশি বেশি তেলাওয়াত করার চেষ্টা করবেন।
আশা করি আপনারা চার কুল পড়ার নিয়ম খুব ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন।
চার কুলের ফজিলত | 4 kuler fazilot
বিভিন্ন হাদিসে এই চারকুল সম্পর্কিত অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই চার কুলের ফজিলত অনেক বেশি রয়েছে। নিচে হাদিসের আলোকে চার কুলের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
পড়ুনঃ এশার নামাজ ১৭ রাকাত কি কি | এশার নামাজ কয় রাকাত |
সূরা নাস এর ফজীলত: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে কোন বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য সূরা নাস ও সূরা ফালাক এর ওপর আর কোন সূরা নেই। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের মধ্যে যতগুলো সূরা আছে তার মধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই সূরা নাস আর ফালাক, কারণ এই সূরা পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে বিভিন্ন বিপদ থেকে পানাহা দান করেন।
সূরা ফালাক এর ফজীলত: অন্য হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূরা ফালাক ও সূরা নাসকে তুলনাহীন বলেছেন। আর তিনি প্রায় প্রত্যেক নামাজের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ সুরা ফালাক ও সূরা নাস তেলাওয়াত করতেন ।
সূরা ইখলাস এর ফজীলত: পবিত্র কুরআনের অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা হচ্ছে সূরা ইখলাস । যদি কোন ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০ পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি মহল নির্মাণ করে দেন। আর এই কথাটি স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বলেছেন তার হাদিসের মধ্যে । ( মুসনাদে আহমদ থেকে পাওয়া যায়)
সূরা কাফিরুন এর ফজিলত: আল্লাহতালা কাফেরদের কে উদ্দেশ্য করে এই সূরাটি নাযিল করেছিলেন । যার কারণে এই সূরার ফজিলত অনেক রয়েছে। তিরমিজি ২৮৯৩ নম্বর হাদিস থেকে পাওয়া যায়: যদি কোন ব্যক্তি একবার এই সূরা কাফিরুন তেলাওয়াত করে তাহলে সে পবিত্র কুরআন মজিদের তিন ভাগের একভাগ পাঠ করার সোয়াব পেয়ে যাবে । আর এই বাণীটি হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিজেই বলেছেন।
উপরে আমরা চার কুলের ফজিলত সম্পর্কে মাত্র একটি করে হাদিসের বর্ণনা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। হাদিস গ্রন্থে এই 4 kul এর গুরুত্ব সম্পর্কে আরো অগণিত হাদিস বর্ণিত রয়েছে । তাই আপনার অবশ্যই এই চার কুল পাঠ করবেন নিয়মিত ।
তিন কুল কি?
তিন কুল এমন তিনটি সূরা কে বলা হয় যেগুলোর শুরুতে কুল শব্দটি আছে। যেমন: সূরা ফালাক, সূরা নাস ও সুরা ইখলাস
চার কুল কি কি?
চার কুল হলো: সূরা নাস, সূরা ফালাক, সূরা কাফিরুন , সূরা ইখলাস, সূরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি ।
শেষ কথা
আজকের পোস্টে আমরা চার কুল সূরা এছাড়াও চার কুল সূরা বাংলা উচ্চারণ এবং চার কুলের ফজিলত সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । এই পোষ্টের কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন । আর চাইলে মূল্যবান পোস্টটি আপনাদের পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।