জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত | জুমার দিনে মহিলাদের আমল
আলাইকুম আশা করি প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা সকলেই আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন। আপনি যদি জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত সম্পর্কে জানতে চান এছাড়াও জুমার দিনে মহিলাদের আমল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন ।
কারণ আজকের আর্টিকেল এ আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত সহ জুমার দিনে মহিলাদের আমল এছাড়াও জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলো নিয়ে আলোচনা করব ।
জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত নিয়ে বিস্তারিত
আমরা সকলেই জানি জুমার দিন অনেক বেশি ফজিলত এর দিন এবং আমরা যদি মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সুন্নত কাজগুলো করি তাহলে অনেক সওয়াব লাভ করতে পারব । আর যদি এই সুন্নত কাজগুলো জুমার দিনে পালন করতে পারি অর্থাৎ জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত যদি আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারি তাহলে এখানে ফজিলত এর শেষ নেই ।
তাই বন্ধুরা আমি বলব যদি আপনি জুমার দিনে আরও বেশি সওয়াব লাভ করতে চান এবং আল্লাহর দিদার অর্জন করতে চান তাহলে জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত সঠিকভাবে আদায় করুন ইনশাল্লাহ আপনি অনেক সওয়াব লাভ করতে পারবেন । নিচে আমরা জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত তালিকা আকারে প্রদান করলাম ।
১. সকালে উঠেই ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে । যদিও নামাজ আদায় করা আমাদের প্রত্যেকের জন্য ফরজ এবং এই কাজ প্রতিদিনই করতে হবে । কিন্তু জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত এর মধ্যে এই কাজটি ও রাখা হয়েছে কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জুমার দিনে অনেক বেশি তাড়াতাড়ি উঠে ফজরের নামাজ আদায় করতেন ।
২. এরপর জুমার নামাজের আগে আমাদেরকে ভালোভাবে মেসওয়াক করতে হবে এবং পরিষ্কার ও সঠিকভাবে গোসল করতে হবে । এই কাজ করা যে শুধুমাত্র জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নতের মধ্যে রয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। আপনি চাইলে প্রতিদিন এমনকি প্রতি নামাজের আগে মেসওয়াক করতে পারেন এবং প্রতিদিন সুন্নত গোসল করতে পারেন এতে করে আপনার সওয়াব এর পরিমাণ আরো বেশি হবে ।
৩. প্রতি সপ্তাহের জুমার দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইতুনের তেল তার মাথার চুলে শরীরে এবং দাড়িতে লাগাতেন তো আপনিও জুমার দিনে এই কাজটি অবশ্যই করবেন। প্রতি জুমায় অবশ্যই জায়তুনের তেল আপনার দাড়িতে , শরীরে লাগিয়ে নিবেন অবশ্যই গোসল করার পর এই কাজটি করবেন ।
৪. জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার আগে অবশ্যই শরীরে সুগন্ধি লাগাবেন এটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক বড় একটি সুন্নত ।
৫. জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নতের মধ্যে অনেক বড় একটি সুন্নত হচ্ছে এই দিন নতুন কাপড় পরিধান করতে হবে। তবে হ্যাঁ যদি আপনার নতুন কাপড় না থাকে তবে যে পুরাতন কাপড়গুলো রয়েছে সেগুলো ভালোমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার পরে সেগুলো পরিধান করে নামাজে যেতে হবে।
৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা যদিও অনেক বড় একটি সওয়াবের কাজ । তবে জুমার দিনে আপনি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবেন তাহলে অন্যদিনের থেকে এখানে বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারবেন ।
৭. জুমার দিনে আপনি চেষ্টা করবেন সুরা কাহাফ সঠিকভাবে তেলাওয়াত করার জন্য আর এই সূরাটি পবিত্র কুরআন শরীফের ১৮ নম্বর সূরা হিসেবে পরিচিত ।
৮. সবাই জানেন মসজিদে যে সর্বপ্রথম ব্যক্তি যায় সে উট কোরবানির সওয়াব পায়। তো আপনি চেষ্টা করবেন এই জুমার দিনে জুমার নামাজের সর্বপ্রথম সবার আগে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার । তাহলে আপনি এখান থেকে আরো অনেক বেশি সওয়াব লাভ করতে সক্ষম হবেন ।
৯. চেষ্টা করবেন কোন যানবাহন ব্যবহার না করে নিজের পায়ে হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় নামাজে নিজের হেঁটে যেতেন ।
১০. মসজিদে প্রবেশ করার পর আপনি যে জায়গায় ফাঁকা পাবেন সেখানেই বসবেন। অন্য কারো ঘার ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না । এতে করে আপনার সওয়াব এর ঘাটতি হতে পারে কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরকম বেয়াদবি কখনই করেন নাই ।
১১. যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন , সাথে সাথে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবেন । আর এই নামাজকে অজুর সুন্নত নামাজ ও বলা হয়ে থাকে। যেটা রসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাজের আগে বা সবসময় অজু করার পর আদায় করে নিতেন ।
১২. মনে রাখবেন জুমার নামাজের খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব একটি কাজ । তাই আপনি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে খুতবাগুলো শুনবেন আর হ্যাঁ খুতবা পাঠ চলাকালীন কখনোই কোন সুন্নত নামাজ আদায় করবেন না ।
১৩. যখন খুতবা চলবে তখন আপনি নিজে থেকে কোন ধরনের কথাবার্তা বলবেন না। এমনকি ইমামের খুতবা চলাকালীন যদি অন্য কেউ কথা বলে তাকেও থামতে বলবেন না। আপনি আপনার মত চুপচাপ বসে ইমামের বলা খুতবা গুলো শুনতে থাকবেন ।
১৪. জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নতের মধ্যে এই সুন্নত টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত , আর এটি হল – খুতবা পাঠ চলাকালীন যদি আপনার চোখে মুখে ঘুম আসে তাহলে অবশ্যই আপনার কাঙ্ক্ষিত স্থান পরিবর্তন করে নিবেন এবং যাতে আপনার ঘুম তাড়াতাড়ি চলে যায় সেজন্য চোখে মুখে পানি দিয়ে নিবেন ।
১৫. মনে রাখবেন জুমার দিন হচ্ছে দোয়া কবুলের জন্য উত্তম একটি দিন কারণ এই দিন অনেক ফজিলতময় একটি দিন । তো আপনি অবশ্যই এই দিনে দোয়া করার চেষ্টা করবেন এবং আসরের নামাজের পরে আল্লাহর নিকট আপনার দোয়াটি করতে পারেন কারণ এই সময়টা দোয়া কবুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় ।
Related Posts
বন্ধুরা আমরা উপরে জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত এর কথা আলোচনা করে দিয়েছি । এই ১৫ টি সুন্নত অবশ্যই ঠিক ঠিক ভাবে পালন করার চেষ্টা করবেন । তাহলে অবশ্যই আপনি অনেক সওয়াব লাভ করতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও আমরা আজকে জুমার দিনে মহিলাদের আমল সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব ।
জুমার দিনে মহিলাদের আমল
গুগলে বিভিন্ন সময় অনেকেই জুমার দিনে মহিলাদের আমল সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করে থাকে । আসলে বন্ধুরা জুমার দিনে মহিলাদের আমল বলতে আলাদা করে কোন কিছু বলা হয় নাই । অর্থাৎ আমরা জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত এর মধ্যে যে সকল আমল গুলোর কথা আলোচনা করেছি । সেগুলোই যদি একজন মহিলা পালন করে অর্থাৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে, গোসল করে এই কাজগুলো করলেই তার জুমার দিনে মহিলাদের আমল হয়ে যাবে ।
শুধু যে জুমার দিনে মহিলাদের আমল করতে হবে এমন কোন কথা নেই সপ্তাহের সব দিনেই আপনি আমল করতে পারেন। তবে জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি তাই চাইলে এই দিনে একটু বেশি বেশি আমল করবেন তাহলে আল্লাহ নিকট আপনি খুব সহজে প্রিয় হতে পারবেন । তবে জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নতের মধ্যে মহিলাদের জুমার নামাজ আদায় করতে হয় না তারা বাড়িতে জোহরের নামাজ আদায় করে নিবে ।
জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় – জুমার দিনে মহিলাদের আমল
সপ্তাহের সবরকম দিনের মধ্যে এই জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি । কারণ এই জুমার দিনে আল্লাহ তায়ালা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন এবং পরবর্তীতে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলো ঘটাবেন।
জানলে অবাক হবেন , হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই জুমার দিনে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তাকে জুমার দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং তাকে জুমার দিনেই আবার পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। এছাড়া পরবর্তীতে শেষ কিয়ামত এই জুমার দিনে ঘটানো হবে ।
এছাড়াও জুমার দিনে আরও বিশেষ কাজ সম্পন্ন হয়েছে যার কারণে এই দিনের ফজীলত অন্য দিনের থেকে অনেক বেশি । যার কারণে অন্যদিনের থেকে যদি আপনি জুমার দিনে সঠিকভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন তাহলে এই দিনে আপনার দোয়া কবুল হয়ে যেতে পারে। তাই বন্ধুরা জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় সম্পর্কে আপনাদেরকে জানতে হবে।
জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় হচ্ছে আসরের নামাজ আদায়ের পর অর্থাৎ মাগরিবের নামাজ আদায়ের আগে এই মাঝখানের সময়টা হচ্ছে সব থেকে বেশি ফজিলত সময় এই সময় দোয়া করলে আল্লাহর নিকট অবশ্যই কবুল হবে ।
পড়তে পারেনঃ জান্নাতের হুরদের নাম জানুন
পরিশেষে
শুধু যে জুমার দিনেই আমল করলে সওয়াব পাওয়া যায় এমন কোন কথা নেই আপনি সপ্তাহের সাত দিনেই আল্লাহর নিকট তার আমল করবেন। তবে জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত যদি আপনি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন তাহলে এখানে আপনার আলাদা ফজিলত রয়েছে । যাই হোক আমরা আজকে পোস্টে জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নতে এছাড়াও জুমার দিনে মহিলাদের আমল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি ।
যদি আমাদের এই আলোচনার মধ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে সেটা ক্ষমা করবেন আর যদি কোন পয়েন্ট বুঝতে সমস্যা সেটাও আমাদেরকে জানাবেন । আশা করি আপনারা জুমার দিনে মহিলাদের আমল এবং জুমার দিনের সুন্নত সম্পর্কে সবকিছু জানতে পেরেছেন। ।
যদি সম্ভব হয় তাহলে আমাদের পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়ে সওয়াব অর্জন করতে পারেন, আসসালামুয়ালাইকুম ।